ভরতের অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রথম টেস্টের শেষ দিনের রিপোর্ট: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে রোমাঞ্চকর প্রথম টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়লো ভারত, তবুও রেখে গেল কিছু প্রশ্ন! (১০ই ডিসেম্বর ২০১৮)



https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEib-zqpu6euWbqteOJS5A_fHjEJXlsgyCO10mmXARaZ5FHh1g7uQgZCs9axXkGY9SVcMafI19AZpwuO9UhG-_V9lu2DKZOaTNyPYmPeo8EcM9HCWc3XdrWR3anunmRFY2U1FcYa1jWmt00/s640/1544367552-ind-aus.jpg
সিরিজের প্রথম ম্যাচ জেতার উৎসব 


আগস্ট ৫, ২০১৮: এজবাস্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে  মোট ২০০ রান করেও কোহলিকে ৩১ রানের হারের যন্ত্রনা সহ্য করতে হলো। সঙ্গে সমালোচনার ঝড় - চেতেশ্বর পূজারাকে বাদ দিয়ে কে.এল. রাহুলকে কেন খেলানো হলো? কেন ৫ বোলারে খেলার দরকার? ফল - ১-৪ সিরিজ হার।


ডিসেম্বর ১২, ২০১৮: এডিলেডে সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে ব্যাটিং -এ তেমন প্রভাব না ফেলেও ৩১ রানে জিতে সিরিজ শুরু করলেন কোহলি। এবার ৪ বোলারেই খেললো ভারত। চেতেশ্বর পূজারা এবং লোকেশ রাহুল - ২জনই খেললেন, পূজারা ১২৩ ও ৭১ রান করে ম্যাচের সেরা! ফল- ভারত কি সিরিজ জিততে পারবে? সময় উত্তর দেবে।


অস্ট্রেলিয়ায় খেলা মানেই ভারতীয় সময়ে ভোরবেলায় উঠে টেস্ট ম্যাচ দেখার নস্টালজিয়া। আর সেখানে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের থেকে মাত্র ছয় উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে ছিল ভারত! চায়ের পেয়ালা হাতে টিভির সামনে বসার পর খুব বেশি অপেক্ষা করতে না করতেই ইশান্তের এক বিষাক্ত বাউন্সারের হদিশ না পেয়ে প্রথম ইনিংসের টপ স্কোরার ট্রেভিস হেড গলিতে রাহানের হাতে তালুবন্দি হলেন। অস্ট্রেলিয়া ১১৫-৫। ভারতীয় পেস বোলার অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানের মুখ তাক করে ১৪০ এর গতিতে বল করছে, আর তা সামলাতে না পেরে ব্যাটসম্যান কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরছে - এই অভাবনীয় দৃশ্য যে এবারে দেখা যাবে সেই আশা আগেই ছিল, তবে কল্পনাতীত হলো ইশান্ত-বুমরা-শামিদের বাউন্সারে পাল্টা আক্রমণ তো দূরের কথা, ভয় পাচ্ছে এই অস্ট্রেলিয়া! তবুও শন মার্শ টিকে ছিলেন, অশ্বিনকে বাউন্ডারি মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন, আর ঠিক তার ১০ রান পরেই বুমরাহ-র এক "আনপ্লেয়েবেল" বলে কট বিহাইন্ড হলেন। লাঞ্চের সময় জেতার জন্য তখনও ভারতের ৪ উইকেট দরকার! আর অস্ট্রেলিয়ার দরকার ১৩৭ রান। ম্যাচে তখনও ২টি ফলাফলই সম্ভব, ভারত যদিও ৬০-৪০ এগিয়ে। কিন্তু বিপক্ষ টেইল-এন্ডারদের সঙ্গে ভারতীয় বোলারদের এক গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে  ইদানিংকালে, তাই অস্ট্রেলিয়াকে পুরোপুরি ম্যাচ থেকে বের করে দেওয়া যাচ্ছিলো না!


https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEin1naoZkD1xywKHY0ROvF6mHbarTNoMDdfQCcLXQ-AdFxJpK3RcM59q6K3jl0OFijqBR1S1WrqdVoY9AlZ-U_tcYzBetHbdcppAGMXrmohvOr40A7DbpX7MU7Ij_b-Hiu_uCfe-KNOaAE/s640/Ashes-5.jpg
শন মার্শ - ৬০ রান 


https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgcYc9YnK9Niheh1cyr4LGgD5ddE8qGJU-E_5VmjFQn64bz16aUxQ-vsknksoSrjGiuMOQF1gZdt_7ewWdNuUKpEGlBYsvoTkNixlBd6O0D8KvOTQD7pyahBJyYGd7ULqczyIyOc0dCnkI/s320/Virat-Kohli-celebrating-the-Australian-wicket-during-1st-Test-in-Adelaide_Getty.jpg
উইকেট পতনের পর উচ্ছাস
এরপরে লাঞ্চের পর খেলা শুরু হলে সমর্থকদের চিন্তা ও ভয়ের সমস্ত কারণ যে সঠিক, তা ভারতীয় বোলাররা প্রমান করতে শুরু করলেন! ১৫৬-৬ থেকে অস্ট্রেলিয়া শেষ অবধি ২৯১ রান যে টানলো, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব ভারতীয় বোলার এবং অবশ্যই অধিনায়ক কোহলির। উইকেটগুলো এক-একটা পড়ার পর কোহলি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে "এগ্রেসিভ সেলেব্রেশন"-এর মধ্যেও কোথাও না কোথাও অনেকক্ষন উইকেট না পড়ার অস্থিরতা ও নৈরাশা চোখে পড়ছিলো! যাই হোক, ভারত ম্যাচ ৩১ রানে জিতলো এবং পাকিস্তানের পরে দ্বিতীয় এশীয় দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়াতে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জেতার কৃতিত্ব অর্জন করলো (৭০ বছরে মোট ১১ বারের সফরে এবারেই প্রথম)! কোহলি প্রথম এশীয় অধিনায়ক হিসেবে এক ক্যালেন্ডার বছরে সাউথ-আফ্রিকা, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ম্যাচ জেতার রেকর্ড করলেন। যদিও সাউথ-আফ্রিকা আর ইংল্যান্ডে একটি করেই টেস্ট জিতেছিল ভারত, সিরিজ হেরেছিল (ইংল্যান্ডে দুরমুশ হয়েছিল)।

এখন দেখার এটাই যে, এই কমজোরি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত সিরিজ জিতে ফিরতে পারে কিনা! ঋষভ পন্থ নিজের ছয় নম্বর টেস্টেই ১১টি ক্যাচ তালুবন্দি করে এক টেস্টে সবথেকে বেশি ক্যাচ ধরার রেকর্ডটি স্পর্শ করলেন (রেকর্ডটি সৃষ্টি করেছিলেন জ্যাক রাসেল এবং এর আগে স্পর্শ করেছিলেন  সুপারম্যান এবি  ডেভিলিয়ার্স)। আর একটি লক্ষণীয় বিষয়, বিরাট কোহলির টসে জেতার রেকর্ড! ২০টি টেস্টে টসে জিতে তিনি ১৭বার টেস্ট জিতেছেন, ৩বার ড্র! মানে এরপর থেকে রবি শাস্ত্রী বা অনুষ্কা শর্মার বিরাট যাতে টসে যেতেন তার জন্য সবরকম প্রার্থনা করা উচিত! শেষবার ১৫ বছর আগে, এডিলেডে জয়ের নায়ক ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়, আর এবারে তাঁরই ঘরানার একনিষ্ঠ ছাত্র চেতেশ্বর পূজারা! আর সেই  ২০০৩-০৪ দলের সাথে আজকের দলের কি মিল আছে জানেন? পার্থিব প্যাটেল। তিনি সেইদিনও ড্রেসিংরুমে ছিলেন, আজও আছেন!


https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjH3SVUIBXLt2n1WqJKC09nw_8vVzyJsnD6RkIrKYfuB6B14sf5uv1r5Qk-7oe8Kn9TgknldvTpvVwXAk1dp1Cell2o9eMKKZUUT3YMTGiKkwuwZbPXREyBu9A15fSC45Pyw4gxOCvhTPk/s320/pant-7591.jpg
ঋষভ পন্থ -ম্যাচে ১১ টি ক্যাচ 


ভারতের সবথেকে "ক্লোস টেস্ট জয়"-এর ক্ষেত্রেও আজকেরটা তিন নম্বরে থাকবে।
  •  ১৩ রানে জয় (বনাম অস্ট্রেলিয়া, মুম্বাই-২০০৪)
  •  ২৮ রানে জয় (বনাম ইংল্যান্ড, কলকাতা - ১৯৭২)
  • ৩১ রানে জয় - আজকের জয়


কিন্তু আজকের এই দুর্বল লেজেগোবরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৩১ রানে জেতা খুব একটা আহামরি জয় বলে মনে হয় না! বরং এই ম্যাচ যদি ভারত কর্তৃত্ব নিয়ে জিততে পারতো, তবে সেই জয় অনেক মধুর হতো! আজকের জয় যে কেন আহামরি নয় বলে আমার মনে হয়, তা এবার আলোচনা করা যাক!


লাঞ্চের পর অস্ট্রেলিও অধিনায়ক টিম পেইন ৭৩ বল খেলে সেট হওয়ার পরেও বুমরাহ-র এক ষষ্ঠ স্ট্যাম্পের বলকে মারতে গিয়ে পন্থের হাতে তালুবন্দি হলেন যখন, তখন অস্ট্রেলিয়া ১৮৭-৭। এখন আমার প্রশ্ন হলো, এরপরেও কেন স্টার্ক, লায়ন বা হেজেলউডকে ৪০-এর বেশি বল খেলতে দেওয়া হবে? প্যাট কাম্মিনস না হয় খুব ধৈর্যশীলভাবে ১২১ বল টিকে ছিলেন, কিন্তু বাকি তিনজন? এইসময়ে পেসাররা যখন বল করছিলেন, তখন না ছিল শর্টলিগ, না ছিল সিঙ্গল আটকানোর কোনো প্রচেষ্টা!  কখনোও আবার দেখলাম সেকেন্ড স্লিপ নেই শুধু ফার্স্ট স্লিপ আর গালি! আবার ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হেজেলউডের জন্য রাখা হয়েছে ডিপ পয়েন্ট! আর এই সময়ে পেসারদের না দেখলাম ইয়র্কার দেবার প্রবণতা, না মুখের উচ্চতায় বাউন্সার! যাওবা এসেছে , তা গুটিকয়েক! অনেকে বলেন লাল বলে, বিশেষ করে কোকাবুরা বলে ইয়র্কার দেওয়া কঠিন ( কিন্তু কেন  ??? ), কিন্তু শর্ট লেগ বসিয়ে বাউন্সার কোনো নয়? আর অশ্বিন যখন বল করছিলেন, তখন শুধু একটা স্লিপ আর সিলি পয়েন্ট! আমার মনে প্রশ্ন আসছে যে, এটা কি শুধুমাত্র অধিনায়কের-ই ভুল নাকি ড্রেসিং-রুমেরই স্ট্রেটেজি? অশ্বিন কেন বলবেন না কোহলিকে যে,  ৯, ১০, ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানের জন্য আমার সিলি পয়েন্ট, শর্ট লেগ, ২টি স্লিপ সব চাই, পারলে ২টো সিলি পয়েন্ট চাই! এই ভঙ্গুর মৃতপ্রায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য ভারত কেন এতো ডিফেন্সিভ যারা সেট হয়েও উইকেট উপহার দিয়ে আসে? একটি মত পেলাম, সেটা হলো, ইংল্যান্ড বা সাউথ-আফ্রিকায় ভারতের যা অভাবনীয় খারাপ ফল ছিল, তারপর অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে নেমেই প্রথম দিনে ভারত ৪১-৪ হয়ে যায় যখন, তারপর থেকেই ভারত বড়ো বেশি অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে পরে! তবে পুরোটাই কি অতিরিক্ত সতর্কতায় ডিফেন্সিভ হয়ে পড়া নাকি ৬-৭ উইকেট পড়ে আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ায় গা-ছাড়া ভাব? লক্ষণীয় বিষয় এবছরটি ভারতীয় পেসারদের হিরে-খচিত বছর বলে যখন ধরা হচ্ছে, তখন বিপক্ষের ৮-১১ নম্বর ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে ভারতীয় বোলারদের গড় অন্যান্য সব দেশের তুলনায় সবচেয়ে খারাপ (১৭.৭৯)। ট্রেন্ডটি  যে মোটেও সুখবর নয়, তা বলাই বাহুল্য!


https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgY7pECjgxrrbnI593NXXFxgHmCRKQU0ub6LqHEwICOWLJFPeXekZgFz-z4pX98Fch4piyoiatG_y1ldkyf_qb3K78-TQ2usOF-k_SXz7HcUXcRZ1YgE3dPcx69SEJDdXKwDsR_2rt319o/s640/742868-bumrahkohli.jpg
ম্যাচে ভারতের সেরা বোলার - নিজের মাত্র সপ্তম টেস্ট খেলা বুমরাহ 


শেষ উইকেটও যখন পড়ছেনা, প্রায় ১০ ওভার পার্টনারশিপ চলছে, অস্ট্রেলিয়া জয় থেকে মোটামুটিভাবে ৪০ রান দূরে, তখনই অশ্বিনের এক বল হেজেলউডের কানায় লেগে সেকেন্ড স্লিপ দিয়ে উড়ে গেল, ধরবার লোক নেই! এরপর সেকেন্ড স্লিপ বসানো হলো এবং আরো দুই ওভার পর হেজেলউড একই ভুল আবার করলেন বলে সেকেন্ড স্লিপে রাহুল একটি ভালো লো-ক্যাচ ধরলেন এবং  শেষমেশ ম্যাচ জিতলো ভারত! কিন্তু হেজেলউড যদি ভুলটি দ্বিতীয়বার না করতেন, কিংবা অস্ট্রেলিয়ার একজন ব্যাটসম্যান যদি দাঁড়িয়ে যেতেন, তাহলে তো আরো একবার কোহলিকে আফসোস করতে হতো! যেমনটা হয়েছিল গলে, কিংবা এই বছরেই কেপটাউন বা বার্মিংহামে! জয়ের খুব কাছাকাছি এসেও কি চোক করার প্রবণতা চলে আসছে বিরাটের ভারতের? সময় উত্তর দেবে! উল্লেখ্য, গতকালও শামির বলে হ্যারিসের যে ক্যাচটি ফার্স্ট স্লিপে পূজারা মিস করেন, সেটা আসলে ছিল সেকেন্ড স্লিপের ক্যাচ! তারপরের বল থেকে কোহলি সেকেন্ড স্লিপ বসান, কিন্তু হ্যারিস আর ওই জায়গায় দ্বিতীয় ক্যাচ দেননি! চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে জানতাম, কিন্তু আর কতবার চুরি হলে বুদ্ধি আসবে?
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiVRQt-vnOYu67yrYpauSF4IGFcAJq3SFCa2rdifFvn0LmF4kbSBbJdgMEWF1spL1WuGsQUQ71QH-kQBQXHAV0GtY7Hv-lryx_-FGKwuAwgsa4j4Vgg6WD5i66RiPMd6cBRAaGpInCAig4/s400/cricket-aus-ind_76c47c18-fc08-11e8-9457-b1b429387a4e.jpg
প্রশ্নের সামনে অশ্বিন 


আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন অশ্বিনকে নিয়ে। আজ পঞ্চমদিনে এডিলেডের এরকম স্পোর্টিং উইকেটে যেখানে এতো ফুটমার্কস আর রাফ, যেখানে এই রাফ ব্যবহার করেই লায়ন  দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে গেলেন, যেখানে রাফকে কাজে লাগিয়ে অশ্বিনের অতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার কথা, সেখানে প্রায় ৫৩ ওভার বল করে কষ্টেশিষ্টে ৩ উইকেট নিলেন! পুরো ম্যাচে ৬ উইকেট! এটাই অবশ্য অস্ট্রেলিয়াতে তিন বারের সফরে অশ্বিনের সেরা পারফর্মেন্স! প্রথম ইনিংসে নিঃসন্দেহে তিনি ভালো বল করেছিলেন, কিছুক্ষেত্রে লায়নের থেকেও ভালো বল করেছিলেন। ঠিক যখন মনে হচ্ছিলো অশ্বিন নিজেকে অনেক উন্নত করে তুলেছেন বিদেশের মাটিতে টেস্ট বোলার হিসেবে, ঠিক সেই সময়ে  দ্বিতীয় ইনিংসে আরো একবার তাঁকে বেশ ফিকে লাগলো! আবারও সেই একই গল্প! টেস্টে প্রায় ৪০০ উইকেট নিয়ে ফেলা অশ্বিন আরো একবার অফস্পিনের বেসিক ভুলে বল ফ্লাইট না করিয়ে বলের গতিতে আর ক্যারম বলে বেশি মনোনিবেশ করেছিলেন! আরও একবার তিনি ঠিক সাউদাম্পটনের মতোই রাফকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ, তা তিনি যতই যুক্তি দিন যে অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই বাঁ-হাতি তাই রাফ কাজে লাগানোর পরিস্থিতি ছিল না! কিন্তু তিনি তো ডানহাতি টেল-এন্ডার কাম্মিনস বা লায়নকেও পরাস্ত করতে পারেননি! এটা কি আসলে "পারফর্মেন্স প্রেশার"? লায়নের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নিজের ওপর বেশি চাপ নিয়ে ফেলেছিলেন? অশ্বিনের ফোন নম্বরটা পেলে জানার চেষ্টা করবো নিশ্চই!


আমার তৃতীয় এবং শেষ প্রশ্ন ভারতীয় টেল-এন্ডারদের নিয়ে। ইংল্যান্ডে স্যাম কুড়ান, স্টুয়ার্ট ব্রডরা দেখিয়েছেন, এখন এই টেস্টে কাম্মিনস, স্টার্ক বা লায়নরাও দেখাচ্ছেন যে, টেল হলেও বিনামূল্যে উইকেট দিতে তাঁরা রাজি নন! যেকোনো প্রথম সারির টেস্ট টিমেরই তাই। কিন্তু ভারতের শেষ তিনজন তো ব্যাট নিয়ে দাঁড়াতেই পারেননা ঠিকভাবে! একসময়ের ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান আশিস নেহরাও বোধয় এদের থেকে ভালো খেলতেন! ইশান্ত যদিও বা একটু-আধটু ধরতে জানেন, শামি তো শুধু ওড়াতে যান, যেদিন লাগলো তো ভালো, না লাগলো তো আরও ভালো! আর বুমরাহ তো ড্রেসিংরুম থেকে আউট হয়েই আসেন! ব্যাটিং-কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার অনেকদিন ধরেই বলছেন যে, টেল-দের আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত, কিন্তু কাজে তো কিছু হচ্ছেনা। ঋষভ পন্থ বা ওপেনার রাহুলকে কিংবা রাহানেকে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেছেন কিনা জানা নেই!


'৯০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়াতে ভারতের সবচেয়ে খারাপ পারফর্মেন্স ধরা হয় আজহারের এবং সচিন নেতৃত্বে যথাক্রমে '৯১-'৯২ সফর এবং '৯৯-'০০ সফর। কিন্তু সেই দলগুলিও আজকের এই সাদামাটা অস্ট্রেলিয়াকে পেলে টুঁটি চিপে ধরতো। বিরাটের ভারত খাতায়-কলমে মোটেও খারাপ দল নয়, কিন্তু কোথাও না কোথাও আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে। প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগের দিন প্রেস কনফারেন্সে সহ-অধিনায়ক রাহানের শারীরিক ভাষা দেখেই অবশ্য তা বোঝা গিয়েছিলো! যেখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটাররাই ভারতকে ফেভারিট হিসেবে ঘোষণা করে দিচ্ছেন, থমসন সাক্ষাৎকারে বলছেন, "এই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং - একা বিরাট কোহলির অর্ধেকও নয়!", সেখানে সেদিন রাহানে কোন অজানা আতঙ্কে কুঁকড়ে থেকে বলে গিয়েছিলেন, যতই অস্ট্রেলিয়া দুর্বল টিম হোক, তারা নিজেদের ঘরের মাঠে খেলছে তাই তারাই ফেভারিট!


https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAiqyxFSSBBB7Z80kZdtFUixVQcblhd8AERUIMwKdyBwqHCctfCUpGH5dAys12SJj8R22wiZyAyPbFrVQ6kYcd23G1qEy9WIRUcpd3SRohz5TNmXzQ40etsB1X_kVdXUbC0qA_nJB1dFo/s640/npttpalo_cheteshwar-pujara-twitter-12-18_625x300_06_December_18.jpg
ম্যান অফ দা ম্যাচ - চেতেশ্বর পূজারা 
প্রথম টেস্টের পর আশা করা যায় ভারত বুঝতে পারবে, তাদের আরো আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত। যতই অস্ট্রেলিয়া বলুক তাদের বোলিং বিশ্ব-সেরা, তারা কিন্তু ৪১-৪ থেকেও এই অতি-সতর্ক ভারতকে ২৫০ অবধি টেনে নিয়ে যেতে দিয়েছিলো! এটাও হতে পারে যে, টপ অর্ডারদের এমন শোচনীয় আত্মসমর্পনের পরেও অস্ট্রেলিয়ার শেষ চার-পাঁচ ব্যাটসমান যে লড়াই করলো, তা থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে "ভালো মানুষের মুখোশ" ঝেড়ে ফেলে পরের টেস্ট থেকে নিজের স্বভাবচিত ঢং-এ অস্ট্রেলিয়া ফেরত এলো! যদিও অতি-বড়ো অস্ট্রেলিয়া সমর্থকও অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়ের আশা দেখছেন বলে মনে হয়না। আর ভারত যদি নিজের অতি-সতর্কতা ঝেড়ে ফেলে ঠিকঠাক দল নির্বাচন করে খেলে, তাহলে এই অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াটওয়াশ না হলেও দুরমুশ করে হারানো উচিত!


                                                                                        ~ সৌরিত্র ব্যানার্জী


                                                                                                (বল পড়ে ব্যাট নড়ে ব্লগ থেকে পুনঃপ্রকাশিত )


Comments