ভারতের ইংল্যান্ড সফর ২০১৮: চতুর্থ তথা শেষ টেস্টার ম্যাচ রিপোর্ট (৩রা সেপ্টেম্বর ২০১৮)
প্রথমে সাউথ আফ্রিকা, তারপর ইংল্যান্ড, আবারও সিরিজ হার। গত কয়েকদিনে অনেক ক্রিকেটপ্রেমী ভারতবাসী স্বপ্ন দেখেছিলেন হয়তো বিরাটের টীম হয়তো ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া হয়ে উঠবে, এই ম্যাচ জিতে পরের ম্যাচটাও জিতে ইতিহাস গড়বে! ব্রাডম্যান না হোক- একটা সৌরভ গাঙ্গুলীর টিম হয়ে উঠতেই পারে, যদি সিরিজ ড্র করে আসতে পারতো! কিন্তু কোথায় কি? এই ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে এসব আশা করা বড়োই অবান্তর। ২০১৭-এর শেষে বিরাট যে স্বপ্ন দেখেছিলেন যে বিদেশেও ভারত জিতবে, তার অর্ধেক শেষ। ইংল্যান্ড-এর আর একটা টেস্ট আর অস্ট্রেলিয়া সফর শুধু বাকি।
তারপরেই আবার ধস, ঠিক প্রথম ইনিংসের মতোই! হার্দিক পান্ড্যার অবদান ০; পান্থ, মইন আলিকে মারার মানসিকতা নিয়ে নেমেছিলেন, কিন্তু মইন বলটা বাইরের দিকে করে পান্থকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন, আর পান্থ বাধ্য ছেলের মতো ক্যাচটা দিয়ে বেরিয়ে এলেন। এরপরেই রাহানের উইকেট। ম্যাচ শেষ। ইংল্যান্ডের হয়ে লোয়ার ব্যাটিং অর্ডারে বাটলার, স্টোকস, কুরান,রাশিদ যে কাজটা প্রতিটা টেস্টে করছিলেন, ভারতের সেই জায়গায় বিরাট একটা শূন্যস্থান! অন্যসময় ভুবনেশ্বর কুমার ব্যাটিংটা করে দেওয়ায় যেটা চোখে পড়তো না- সেটা এই সিরিজে খুব চোখে লাগছে। ৫ উইকেট পরার পরে প্রথম ইনিংসের পিচেই একজন ৩০ বল খেলার মতো ব্যাটসম্যান নেই এখন, সেখানে চতুর্থ দিনের রাফে পরে বল লাফানোর মতো পিচে তাদের থেকে কিছু আশা করা চরম বোকামো।
২০১২-তে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের মন্টি পানেসার আর গ্রেম সোয়ান,
২০১৪তে এই ইংল্যান্ডেই মইন আলি,
২০১৫-তে অস্ট্রেলিয়ায় নাথান লিওন,
২০১৬-এর ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড-এর স্যান্টনার আর ইশ সোধি,
২০১৭ -তে আবার ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ও-কাফি আর লিওন,
তারপর কালকের রোজ -বোলে আবারও একবার মইন আলি।
পিচ এমন কিছু কঠিন ছিল না, মইনও কোনোও সাকলিন মুস্তাক বা মুরালিধরণ হয়ে ওঠেননি , যেটা করেছেন সেটা হলো শুধু জায়গা মতো রাফের ওপর বলটা নিয়মিত ফেলে গিয়েছেন , বাকি কাজ পিচ করে দিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের প্রয়োগক্ষমতার অভাব চোখে বড্ডো লাগছিলো! সুতরাং ভারতের স্পিন খেলার প্রতি দুর্বলতা আরও একবার প্রকট হলো। মইন আলি ম্যাচে মোট ৯ উইকেট আর প্রথম ইনিংসের মহাগুরুত্বপূর্ণ ৪০ রান - সবমিলিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই একই পিচে অশ্বিনের জুটেছে শুধুমাত্র ৩টে উইকেট। এরপরে আবারো বিদেশে অশ্বিনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
১) স্পিন খেলার সঠিক টেকনিক কে শেখাবে?
২) কে এল রাহুল স্লিপে অনেক ক্যাচ ধরছেন ঠিক কথা, কিন্তু তাঁর ব্যাটে রান কই? তিনি রোহিত শর্মা- ২ হয়ে উঠছেন না তো? আর ওপেনাররা কবে রান করবেন? এরপরেও ধাওয়ান টিকবেন নাকি পৃথ্বি শ্ব -এর ভাগ্যে শিকে ছিড়বে?
৩) অশ্বিন কি পুরোপুরি ফিট ছিলেন? যদি না থাকেন তবে কেন জাদেজাকে খেলানো হলোনা?
৪) পাণ্ড্য, পান্থ -এদের দিয়ে লোয়ার মিডল অর্ডার কিভাবে চলবে? আর কুরানের থেকে কি পাণ্ড্য কিছু শিখতে পারলেন?
৫) পূজারার ভেতরে ঢুকে আসা বলের সমস্যার সমাধান করবেন কে? প্রথম ইনিংসে পূজারা যে ১৩২ রানের অসাধারণ ইনিংসটি খেললেন, সেটা তো স্মৃতির কোনায় মিলিয়ে যাবে, যদি না এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়!
এই সিরিজ আর যাই হোক বিরাট-বাহিনীর কাছে একটা মস্ত শিক্ষা তো অবশ্যই - যদি তারা শিক্ষাটা নেন তবে ভবিষ্যতে তাদেরই ভালো; যদিও সাউথ আফ্রিকা সফরের শিক্ষা তো তারা মনে রাখেননি! এই দুটি সিরিজেই লর্ডস টেস্ট বাদ দিয়ে, ভারত সুযোগ তৈরী করেছে অজস্র,কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। সুযোগ তৈরী করে কাজে না লাগাতে পারার কোনো মাহাত্ম্য নেই, তাতে এইরকম "ক্লোস গেম" হারতে হারতে "চোকার" ট্যাগ না লেগে যায়! এই ইংল্যান্ড, এই সাউথ আফ্রিকা আগের মতো শক্তিশালী টীম না হলেও ভারত তাদের হারাতে ব্যর্থ - হয়তো আমরা যতটা ভালো বিশ্বাস করি, ভারতের টিমটা ততটা ভালো এখনো অবধি হয়ে উঠতে পারেনি!
- সৌরিত্র ব্যানার্জী
(৩রা সেপ্টেম্বর ২০১৮)
(বল পড়ে ব্যাট নড়ে ব্লগ থেকে পুনঃপ্রকাশিত )
Comments
Post a Comment